,

পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারে অসহায় ২শ পরিবার; নিহতের ঘটনায় ঘরবাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট

কাশিয়ানী প্রতিনিধি: কেউ দেখায় ক্ষমতার দাপট কেউবা আবার টাকার। কেউ কাদঁছে স্বজন হারা বেদনায়, কেউবা আবার সম্পদ হারিয়ে কাঁদছে দ্বারে দ্বারে। এভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করছে একটি গ্রামের প্রায় দুইশ পরিবার। এদের মধ্যে মুষ্ঠিমেয় বাদে অধিকাংশ পরিবারের লোক শ্রমজীবী। ওই পরিবার গুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিরিহ পরিবার গুলো প্রশাসনের সাহায্য কামনা করছে।

রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সাজাইল বাজার থেকে রাস্তা দিয়ে কিছুদূর উত্তর দিকে যেতেই চোঁখে পড়ে ১০ থেকে ১২ জন মহিলা রাস্তার পাশে বসে আছে এঁদের মধ্যে একজন কাঁদছে অন্যরা তাকে শান্তনা দিচ্ছেন। কি হয়েছে জানতে চাইলে অশ্রু জড়িত কন্ঠে বলেন “ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে” আমার ভাইকে ওরা বাঁচচতে দিলোনা। পাশের ঘর থেকে লিংকন (২৩) নামের এক যুবক এসে হাউমাউ করে কেঁদে বললো “আমি আমার আব্বুকে হাসপাতালে দেখতে যেতে পারিনি, আমার আব্বুকে ওরা (২ এপ্রিল) হাত ও পায়ের রগ কেটে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। রাস্তায় বের হলে আমাকেও ওরা মেরে ফেলতে পারে এমনটি বলছিলেন নিহত লিটু সরদারের ছেলে ও বোন নার্গিস বেগম (৫২)।

সাম্প্রতি এমন চিত্র দেখাযায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের রাইতকান্দি গ্রামে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াই টা পর্যন্ত ওই গ্রামের একাধিক লোকের সাথে কথা হলে তাঁরা বলেন, ওই গ্রামের সরদার বংশ ও মুন্সি বংশের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে।

৭ বছর আগে জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারনে সরদার বংশের কয়েকটি পরিবার সরদার পাড়া থেকে মুন্সি পাড়া এসে বাড়ি করে এবং মুন্সিদের দলে চলে যায়। সরদার বংশের লোকের আছে টাকার দাপট আর মুন্সি বংশ তুলনা মুলক আর্থিক ভাবে দূর্বল। সরদার বংশের নেতৃত্ব দেন এনায়েত ও রঞ্জু সরদার অন্যদিকে মুন্সি বংশের আসাদ মুন্সি। ওই গ্রামের বাসিন্দা আজমল শেখ বলেন, এক সপ্তাহ আগে সরদার বংশের লোকজনতুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহত লিটু সরদারের (মুন্সিদের দলের) ছেলে লিংকন সরদারকে মারপিট করে সরদার বংশের লোকজন

এনিয়ে লিটু সরদার কাশিয়ানি থানায় অভিযোগ করে, পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উভয় পক্ষকে থানায় নিয়ে মিমাংসা করে দেয় এবং মুচলেকা রাখে। মুচলেকা দিয়ে আসার পরের দিন সরদার বংশের মোহাম্মদ সরদার নিহত লিটু সরদারকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়, লিটু পুনরায় থানায় অভিযোগ করে বাড়ি ফেরার পথে সাজাইল বাজারে ঢোকার আগে তাকে বহন কারি ভ্যানের গতিরোধ করে ২৫ থেকে ৩০ জন মিলে এলোপাথাড়ি ভাবে কোপায় এবং হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। স্থানিয়রা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই রাতেই মুন্সি বংশের লোকজন সরদার বংশের ৩১টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের মনির মোল্লা, জাহাঙ্গীর, মুন্নু, হাবিবুর, আমিনুর, সাহিদ মজিদ, হামিদুল মোল্লা, টিপু শেখ, জাহিদ মোল্লা, মান্দার মোল্লা, বাবু ফকির, আলি শেখ, আবুল শেখ, কাবুল শেখ, জনু শেখের বাড়িসহ ৩১টি বাড়ি-ঘর, ফ্রিজ, আলমারি, ট্রাঙ্ক, লাগেজ, যাবতিয় আসবাপত্র, বৈদুতিক মিটার ভাঙচুর করেছে। এসব পরিবারের লোকেরা অধিকাংই নিজের ঘরে বসবাস করতে পারছেনা।

সাহেদা বেগম (৮০) কেঁদে কেঁদে বলেন, শুক্রবার সকালে ৩০-৪০ জন মানুষ এসে রামদা, সাবল দিয়ে বেড়ায় কোপাতে থাকে। পরে ঘরে ঢুকে আমার দুই ছেলের ঘরে কলাই, ধনিয়া, কাপড় সোনা, টাকা পয়সা যা ছিলো নিয়ে যায়। আমার গোয়ালে ৩টি গরু ৩টি ছাগল ছিলো তা নিয়ে গেছে। আমি গরুর দড়ি ধরে টানাটানি করে বলি বাবা গরু নিয়ো না তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গরু নিয়ে গেল। আমাদের ঘরের কিছু রেখে যায়নি। আমার কোন ছেলে বাড়ি থাকেনা, আমাদের অপরাধ আমরা সরদারদের দল করি। কথা হয় সরদার বংশের রাজ মিস্ত্রির কাজ করেন ডলি বেগমের সাথে। তিনি বলেন, লিটু হত্যার পর এই গ্রামে পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে। মুন্সিদের লোকজন এসে ৩১ টি পরিবারের ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং টাকা-পয়সা ফসলাদি যা ছিলো সব নিয়ে গেছে। এখন এই পরিবারে লোকজনের থাকার জায়গা নেই।

তবে এটা মুন্সিদের দলের লোকজন প্রতিশোধ নিয়েছে , কারন এক বছর আগে সরদার বংশের লোকজন মুন্সিদের ১৫০ (দেড়শ) ঘর ভাঙচুর করে। মুন্সিদের নেতৃত্ব দান কারি আসাদ মুন্সি বলেন, র্দীঘদিন যাবত এই গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা। যা প্রতি বছরই হয়, ২০১৯ সালের এই সময় আমাদের দলের ১৫০টি ঘর সরদার বংশের লোকজন ভাঙচুর করে। এবার আমাদের দলের লোক মেরে ফেলেছে। এরজন্য হয়তো দু’একটা ঘর ভাঙচুর করেছে। সরদার বংশের নেতৃত্ব দেন এনায়েত সরদার ও রঞ্জু সরদারের বাড়ি গিয়ে তাদের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের ঘরে তালা বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্ত কারি কর্মকর্তা ও কাশিয়ানি থানার উপ-পরিদর্শক ফিরোজ আহমেদ মুন্সি বলেন, লিটু হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী পারভিন আক্তার বাদি হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছে এখন পর্যন্ত ৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলা হজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিরা পালাতক আছে, তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এলাকা এখন শান্ত আছে।

এই বিভাগের আরও খবর